এস.এম. হাবিব জাহান হেলাল এর গুচ্ছ কবিতা

 








এইতো সে-দিন

এইতো সে-- দিন,

সকলের আদর-সোহাগ আর ভালোবাসায়,
হেসে-খেলে, হৈ-চৈ করে কেটে গেল চিন্তাহীন দুরন্ত শৈশব ।
এইতো সে-দিন,
বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে হৃদয়ে নূতন অনুভুতি, নূতন শিহরণ
জাগিয়ে জীবনে এলো বাঁধা-বন্ধনহীন রঙ্গীন কৈশর ।
এইতো সে-দিন,
জীবনে এলো শ্রেষ্ঠ সময়, বসন্তের সুরভী নিয়ে নব-যৌবন ।
শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচুড়ার বাসন্তি রঙ্গে রঙ্গিন হলো হৃদয়,
দক্ষিণা সমিরনে মনে দোলাদেয় ভালোলাগা আর ভালোবাসার আকুতি ।
এইতো সে-দিন,
জীবনের মধ্যাহ্নে ভালোলাগার একজন এলো নব-বধু হয়ে,
শুরু হলো জীবনের নূতন অধ্যায়, এক স্বর্গীয় অনুভূতি নিয়ে,
সুখে-দুখে, আনন্দ-বেদনায়, ফুলে-ফসলে ভরে উঠলো জীবন সংসার ।
এইতো সে-দিন,
জীবনের অপরাহ্নে দাঁড়িয়ে শুধুই অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করা,
ফেলে আসা জীবনের মধুময়, সোনালী দিনগুলো ফিরে ফিরে দেখা ।
এইতো সেদিন,
জীবনের সায়াহ্নে এসে বার বার মনে হলো এত দ্রুত ফুরালো জীবন,
পৌষের দিনগুলোর মত, শুরু হতেই দিন শেষ, মাস শেষ, বছর শেষ ।
কত যে অতৃপ্ত আশা, কামনা-বাসনা সবই অপূর্ণ, অসমাপ্ত রয়ে গেল ।
এইতো সে-দিনের, দিন,
তেজদ্বীপ্ত সূৰ্য্যটা, আজ গোধুলী লগ্নে রক্তিম, ধুসর-মলিন,
বেদনা বিধুর বিদায়ের রাগিনী বাঁজিয়ে অস্তাচলে গমনের অপেক্ষায় ।
এইতো সে-দিন,
মেঘে মেঘে গড়িয়ে গেছে অনেক সময়, অনেক দিবস, অনেক বছর,
তবু কেন অতৃপ্ত হৃদয় বার বার হাহাকার করে প্রশ্ন করে,
এইতো সে-দিন?

জ্যোৎস্নার আকর্ষণে


জ্যোৎস্নার দুর্বার আকর্ষণে দুর্গম এ পথ চলা 
দীর্ঘপথ, অন্ধকার, এলোমেলো, দুর্গম, বন্ধুর 
তবু যেতে হবে সেথা, শত বাঁধা পেরিয়ে 
কাঁশবন, বাঁশবন, নদী-নালা, খাল-বিল
শ্মসানঘাট আর ৭১ এর বধ্যভূমি 
কোন কিছুই রুখতে পারেনা, দুর্গম এ পথ চলা ।


প্রতিদিন জোয়ারের পানি ছুটে আসে জ্যোৎস্নার গানে
অন্তহীন এ ছুটে চলা, এক বিরহিনী প্রেয়সীর টানে 
যে বিনিদ্র রজনী ব্যাকুল হৃদয়ে প্রহর গুণছে প্রতীক্ষায় 
তার গভীর ভালোবাসা, উষ্ণ আলিঙ্গনের পরশ
অন্ধকারে পথ দেখায়, দুর্গম পথ চলায় প্রেরণ যোগায় 
ভয়ভীতিহীন এ পথ চলায়, নেই কোন ভ্রান্তি
প্রেয়সীকে কাছে পাওয়ার নেশায়, নেই কোন ক্লান্তি 
আছে শুধু দু'টি হৃদয়ের মিলনের অন্তহীন আকুতি ।


অবশেষে জ্যোৎস্নার দুর্বার আকর্ষণে ছুটে আসা জোয়ারের পানি
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, ভালোবাসার সাগরে ।

সুখের সন্ধানে

ছুটছি মোরা ছুটছি, সুখের সন্ধানে ছুটছি 
সুখ হলো এক সোনার হরিণ, সে কথাটা ভুলছি 
দুনিয়াতে সুখ না পেলে, জীবন হবে ব্যর্থ 
যে করেই হোক সুখ চাই, নইলে জীবন নিরর্থ
তাইতো মোরা সুখের লাগি, ছুটছি দিবা-রাত্র ।


সুখের লাগি ন্যায়-অন্যায় আপনজনকে ছাড়ছি 
যেভাবেই হোক সুখ চাই, তাই অন্যের ধন লুটছি
টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায়, তাই টাকার পিছে ছুটছি 
সম্পদে আনে সুখ, তাই সম্পদের পাহাড় গড়ছি ।


কিন্তু কোথাও সুখ নেই যে, মিথ্যা মরিচিকা
সুখের তরে সারা জীবন দৌঁড়ে হলাম ক্লান্ত
সুখ হলো এক সোনার হরিণ সব চেষ্টাই ভ্ৰান্ত ।


সুখের মালিক সৃষ্টিকর্তা, করলে আত্মসমৰ্পণ
তিনিই দাতা, তিনিই মালিক, তিনিই করেন অর্পণ ।


কি পেয়েছি, কি পাইনি হতাশ করোনা মনটারে
যা পেয়েছ, তাই নিয়ে সুখ সৃষ্টি কর অন্তরে ।


দু'দিনের এই দুনিয়ায় সুখের পিছে না ছুটে
ভালোবেসে নিজকে বিলাও, সুখ মিলবে অন্তরে ॥

সোনালী অতীত

হে সোনালী অতীত
তুমি বার বার ফিরে ফিরে দেখা দাও
আমাদের স্মৃতির ক্যানভাসে,
ভুলতে চাইলেও ভুলতে পানি না
সেই সোনালী দিনের স্বর্ণালী স্মৃতিগুলো
. মনের মাধুরী মেশানো
কত যে গান, কবিতা, ছায়াছবি
আজও হৃদয়ে ঝড় তোলে
বুলিয়ে দেয় সুখের পরশ।


হে সোনালী অতীত
তুমি কেড়ে নিয়েছ মোদের
হাসি-আনন্দে ভরা সোনালী দিনগুলো,
সেই সাথে নিয়েছ কেড়ে
মায়া-মমতা, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা
এখন মনে হয় সব যেন প্রাণহীন ।

হে সোনালী অতীত
তোমার মাঝে হারিয়ে যায়
কত সোনালী মানুষ ।


রেখে যায়, কত সৃষ্টি, কত অবদান
তাদের শূন্য আসনগুলো, পড়ে থাকে
পূরণ হয় না আর
সোনালী মানুষ বিহনে।


আজ নেই সম্মান, নেই মূল্যায়ন
সত্য-নিষ্ঠ, জ্ঞানী-গুণী জনের,
জন্মায় না আর সোনালী মানুষ 
সর্বত্র শুধু নির্লজ্জ জবর দখল,
অসৎ, অযোগ্য, চাটুকারদের ভীড়ে
সোনালী মানুষগুলো কোণঠাসা।
অবজ্ঞা, অবহেলা আর অপমানে,
চলে যায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে।
তাদের অমূল্য অবদান থেকে
বঞ্চিত হয় দেশ, বঞ্চিত হয় জাতি।


আর কতদিন চলবে এই অনিয়ম, বঞ্চনা?
ভেঙ্গেচূড়ে একাকার করে দাও
যত অনিয়ম, যত লাঞ্ছনা 
সোনালী অতীতের আদর্শ নিয়ে
গড়ে তোল, এক নূতন পৃথিবী ।

 প্রিয় সন্তান


প্রিয় সন্তান মোর, আদরের ধন, আমার চোখের মনি
তোরাই আমার শেষ ভরসা, যেন সোনার খনি 
কত স্নেহাদর, ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি তোদের
শত ঝড়-ঝাপটা, বিপদ আপদে আগলে রেখেছি যাদের ।
সারাদিনমান খেটেছি কত, তোদের সুখের লাগি
সব কষ্ট দূর হয়ে যেত, তোদের সোনামুখগুলো দেখি ।


তোমরা এখন বড় হয়েছ, আমি হয়েছি বুড়ো
এটাই জগতের চিরন্তন নিয়ম ব্যতিক্রম হয়না কারো 
বৃদ্ধকালে দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ শক্তি সবই গেছে কমে
প্রতিক্ষণে শুধু ভুল করে ফেলি, থাকে না কিছুই মনে 
চলতে পারিনা একা, পা দুটি দুর্বল
তাই বলে, অন্ধ, বধির, খোঁড়া বলে গালি দিওনা মোরে ।
প্রবীণ মোরা মনটা মোদের বড়ই অভিমানী
গালমন্দ, তিরস্কার আর অবহেলা পেলে
বড়ই কষ্ট পাই মোরা হৃদয় ভেঙ্গে গেলে ।
প্রিয় সন্তান মোর, সেই দিনে একটু হলেও হাতটা আমার ধরো ।


যুবাকালে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে, আনন্দ করেছি কত
আজকে সবাই ব্যস্ত অতি, এড়িয়ে চলে যত 
নিঃসঙ্গ আমি, একা একা থাকি, সময় কাটেনা আর 
ফিরে যেতে ইচ্ছে করে, সোনালী সেই দিনে বার বার 
প্রিয় সন্তান মোর, সেই দিনে একটু হলেও সঙ্গ দিও মোরে ।


আর বেশীদিন থাকবো না ভবে, বুঝি মনে মনে
পরপারের ডাক শুনি আজ প্রতিদিন, প্রতি ক্ষণে 
অনেক কষ্ট, অনেক যাতনা দিয়েছি বৃদ্ধকালে
অসহায় ভেবে ক্ষমা করে দিও, আমি চলে গেলে 
মৃত্যুকালে সবাই তোমরা থেকো আমার পাশে
সাহস দিও, যেন যেতে পারি, না ফেরার সেই দেশে


তোমরা সবাই সুখে থেকো, ভালো থেকো অন্তিম মোর আশা
বিদায় কালে দিয়ে গেলাম অনেক দোয়া, অনেক আশিষ, অনেক ভালোবাসা ।


6] ভালোবাসার অবদান

এস . এম. হাবিব জাহান হেলাল


ভালোবাসা সৃষ্টিকতার ঐশ্বরিক  দান

রাখতে পারে জগত মাঝে, বিশাল অবদান

যৌবনে হৃদয় মাঝে, জন্মে ভালোবাসা

সুবাস ছড়ায় মাঝে মাঝে রঙ্গিন কত আশা,


বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, অমূল্য সেই ধন

দক্ষিণ হাওয়ায় খুঁজে বেড়ায় সুন্দর একটি মন

কেউবা আবার  ভুল করে যায় প্রতারণার ফাঁদে 

মৃত্যু হয় ভালোবাসার সারাজীবন কাঁদে। 


স্নেহ মায়া, প্রেম পিরিতি আর মধুর মিলন

সবকিছুতেই ভালোবসার অসীম অবদান


জগতের দন্ধ সংঘাত, অশান্তি-বিছেদ

ভালোবাসায় জয় করা যায়, সবকিছু নিঃশেষ।

বিলিয়ে দিলে ভালোবাসা, হয় না কভু শেষ;

বিলাবে যত, মিলবে তত, হবে না নিঃশেষ।


ভালোবাসা পেতে মোরা সবাই শুধু চাই

প্রতিদানে কৃপনতা, উদার মনন নাই।


বিলিয়ে দিয়ে ভালোরাসা, ছেড়ে অহংকার

জয় করা যায় হৃদয়-মন  জগত- সংসার

হিংসা ভুলে, জগত মাঝে বিলাও ভালোবাসা

বিশ্ব হবে স্বর্গসম, উদার মানবতা ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

Ads

Ads