কবি আলী জহির এর রচিত "ভয়ে মরে যায়" -কবিতাটির বিশ্লেষণ
byRoshodhani•
0
“ভয়ে মরে যায় আলী জহির খস করে কোনো গাছের পাতা ঝরে পড়লেই পা থেকে মাথাসমেত অন্য ভুবনে ঢুকে যায় । মগডালে শিস দিয়ে ডাকে কুহক পাখি হাতছানি দেয় বৃক্ষের পত্রসকল । নিশির আঁধারে চরাচর হয় নিস্তব্ধ শীতে ভয়ে—ডরে মরে যায় । ”
১. কবিতার বিষয়বস্তু (Theme) কবিতাটি মূলত ভয় নিয়ে লেখা। নিশির নিস্তব্ধতা, গাছের পাতার ঝরে পড়া, পাখির ডাক — এসব প্রাকৃতিক ঘটনাকে ভয়ঙ্কর মনে হওয়া এবং মানুষের মানসিক ভীতির প্রতিফলনই এখানে মূল বিষয়। এটি মানসিক আতঙ্ক ও অজানার ভয়কে তুলে ধরে।
২. গঠন ও রূপ স্তবক সংখ্যা: ১টি (একটানা লেখা)। ধরণ: মুক্তছন্দ (নির্দিষ্ট ছন্দ বা অন্ত্যমিল নেই)। পঙক্তি সংখ্যা: ৬টি। ছন্দ: স্বাভাবিক কথ্যধর্মী ছন্দ। মাত্রা: নির্দিষ্ট মাত্রাবিন্যাস নেই।
৩. ভাষা ও অলঙ্কার ভাষা: সহজ, কিন্তু কাব্যিক রূপ আছে। অলঙ্কার: অনুপ্রাস: “ভয়ে—ডরে মরে যায়” (ধ্বনির পুনরাবৃত্তি)। মানবীকরণ: “হাতছানি দেয় বৃক্ষের পত্রসকল” (পাতাকে মানুষের মতো আচরণ করানো)। অনুকরণ ধ্বনি: “খস করে” শব্দটি পাতার ঝরে পড়ার শব্দ অনুকরণ করেছে। প্রতীকবাদ: রাত, অন্ধকার, শীত — ভয় ও অজানার প্রতীক।
৪. চিত্রকল্প ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা কবি এমনভাবে বর্ণনা দিয়েছেন যে পাঠকের মনে দৃশ্য ও শব্দ জীবন্ত হয়ে ওঠে— দৃষ্টি: পাতার ঝরে পড়া, বৃক্ষের পত্রের হাতছানি। শ্রবণ: “খস করে” পাতার শব্দ, পাখির শিস। স্পর্শ: শীতের অনুভূতি।
৫. ভাব ও মনোভাব কবির দৃষ্টিভঙ্গি: ভয়ের মুহূর্তগুলো বাস্তব ও গভীরভাবে প্রকাশ। মেজাজ : ভয়, নিস্তব্ধতা, উত্তেজনা। পাঠকের মনেও এক ধরনের ঠাণ্ডা শিহরণ ও অজানার আতঙ্ক তৈরি হয়।
৬. প্রতীক ও গোপন অর্থ পাতা ঝরে পড়া: ক্ষুদ্র ঘটনাও আতঙ্কের কারণ হতে পারে। কুহক পাখি: অজানা ও বিভ্রান্তিকর বিপদের প্রতীক। শীত ও অন্ধকার: একাকিত্ব ও অনিশ্চয়তার প্রতীক।
৭. আবেগীয় প্রভাব পাঠকের মনে ভয়ের অনুভূতি জাগে, বিশেষ করে যারা রাতের নির্জনতা বা গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত, তাদের কাছে দৃশ্যগুলো আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে। ৮. মূল্যায়ন সৌন্দর্য: সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরভাবে অনুভূতি প্রকাশ। মৌলিকতা: সাধারণ প্রকৃতির দৃশ্যকে ভয়ের অনুভূতিতে রূপান্তর। বার্তা: আমাদের ভয় অনেক সময় বাস্তব ঘটনার চেয়ে কল্পনায় বেশি প্রবল।
৯. ধ্বনি ও ছন্দ নির্দিষ্ট অন্ত্যমিল নেই, তবে প্রাকৃতিক ধ্বনি (“খস করে”, “শিস দিয়ে”) কবিতার সুরেলা গুণ বাড়িয়েছে। পুনরুক্তি (“ভয়ে—ডরে”) ভয়ের তীব্রতা বাড়ায়।
১০. স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতা কবি খুব অল্প শব্দে রাতের নীরবতা ও মানসিক ভয়কে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রাকৃতিক শব্দ ও দৃশ্য ব্যবহার করে মানুষের অন্তর্লোকের ভীতি প্রকাশ—এটাই কবিতার মৌলিকতা।