বেমানান
-আরিফুর রহমান
কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই পার্টি অফিসে ঢুকলেন কামাল সাহেব। আর্থিক অনটন
আর ক্রমবর্ধমান চাহিদা তাঁকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে এ-পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। পার্টির এই
অঞ্চলের সভাপতি তাঁর সহপাঠী। তাঁকে পার্টি অফিসে দেখে অবাক হলেন।
‘আরে মাস্টার যে! তু-মি পার্টি অফিসে? পথ ভুইলা আসছো?’
‘না, মানে, ইয়ে...।’
‘বসো বসো। বুঝছি। অ-ই মাস্টাররে চা দে।’
‘আসছি ওই আমার ছেলেটার জন্য। ওর একটা চাকরির জন্য তোমাকে...।
অনার্স কমপ্লিট...।’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ মাস্টার। আমার মনে আছে। এমপি সাবের লগে কতাও কইয়া রাখছি।
হয়া যাবে একটা কিছু।’
‘আমার বর্তমান অবস্থা তো জানোই। রিটায়ার্ড মানুষ...!’
‘তয় মাস্টার, তোমারেও কিন্তু আমারে দেখতে হবে। গত নির্বাচনে তোমাগো বড়
বাড়ির একটা ভোটও আমি পাই নাই। ফেল মারছি। কিন্তু এবার তো সমস্যা নাই, দল
পাল্টাইছি, বড় চেয়ারও পাইছি। আশা করি, বড় বাড়িসহ সব গ্রামের ভোট আমি পামু
আর এইবার চেয়ারম্যানও হমু।’
কিছুক্ষণ পর কামাল সাহেব বেরিয়ে এলেন। খুব দম বন্ধ লাগছিল তাঁর। শেষ দিকে
সভাপতি মহোদয়ের যমজ পুত্র এসে বসেছিল কামাল সাহেবের পাশে। তাঁরই ছাত্র। সালাম-কালাম নেই। যেন চিনতেই পারল না তাঁকে!
পার্টি অফিস থেকে বেরোতে গিয়ে হোঁচট খেলেন তিনি। নিজেকে সামলে
নিলেও তাঁর বুক পকেট থেকে পড়ে গেল প্রিয় কলমটা। বিপরীত দিকের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে কলমটা নিজের মাথা থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে গিয়ে সেই দরজার কাছে থামল।
তিনি এগিয়ে গেলেন কুড়িয়ে নিতে।
‘মাস্টারের সামনে ভালো একটা মুলা ঝুলাইছি। এইবার বড় বাড়ির ভোট পাওয়া যাবে। কি বলিস?'
'জি, আব্বা।’
“আচ্ছা, কামাল তো তোদের স্যার। তোরা তো ওরে সালামও দিলি না, কতাও কইলি না?'
“আব্বা, যার জন্য বড় বাড়ির এত্তোগুলা ভোট পান নাই আপনি, তারে কিসের সালাম?'
‘কিসের ইজ্জত?’
‘সাব্বাস, বাপের ছেলে।'
কামাল সাহেব আঁতকে উঠলেন। এরা কারা! এই ঝা-চকচকে অফিস, এই সুসজ্জিত ঘর,
এই আভিজাত্যে এরা বেমানান। এখানে এদের এতটুকুও মানায়নি!